পাঢ় এসিড এবং গাঢ় ক্ষার অত্যন্ত ক্ষয়কারক পদার্থ। এগুলো কাপড়-চোপড় এবং শরীরে লাগলে ত্বক ও কাপড়কে ক্ষয় করতে পারে। এগুলো চোখে গেলে চোখ নষ্ট হয়। পানির মধ্যে গাছ এসিড বা গাঢ় ক্ষার অল্প অল্প করে যোগ করে তাকে দ্রবীভূত করে লঘু দ্রবণ তৈরি করা হয় ।
যদি অসাবধানতাবশত কোনো পাঢ় এসিড বা গাঢ় ক্ষার শরীরে লেগে যায় তবে তোমাকে পানি দিয়ে বারবার সেই জায়গায় ধুতে হবে। এরপর শিক্ষককে জানাতে হবে।
তীব্র বা সবল এসিড জলীয় দ্রবণে মৃদু বা দুর্বল এসিড অপেক্ষা অধিক পরিমাণে H+ সরবরাহ করে। অধিক পরিমাণে H+ জলীয় দ্রবণে অধিক পরিমাণে বিদ্যুৎ পরিবহন করে। এজন্য বারটি অধিক উজ্জ্বলতার সৃষ্টি করে। পক্ষান্তরে, মৃদু এসিড জলীয় দ্রবণে তীব্র এসিড অপেক্ষা কম পরিমাণে H+ সরবরাহ করে। কম পরিমাণে H+ জলীয় দ্রবণে কম পরিমাণে বিদ্যুৎ পরিবহন করে। এজন্য বাল্বটি কম উজ্জ্বলতা সৃষ্টি করে।
মৃদু এসিড → কম পরিমাণে H+ (প্রোটন) উৎপন্ন হয়।
তীব্র এসিড → বেশি পরিমাণে H+ (প্রোটন) উৎপন্ন হয়।
(একইভাবে তীব্র ক্ষার NaOH ও মৃদু ক্ষার NH4OH নিয়েও পরীক্ষা করে দেখা যায় যে, NaOH দ্রবণ বাল্বটির অধিক উজ্জ্বলতা সৃষ্টি করে। পক্ষান্তরে, NH4OH দ্রবণ বাল্বটির কম উজ্জ্বলতা সৃষ্টি করে। এই পরীক্ষা থেকে প্রমাণিত হয় NaOH তীব্র ক্ষার, পক্ষান্তরে NH4OH মৃদু ক্ষার।)
pH এর ধারণা (The Conception of pH)
কোনো জলীয় দ্রবণের প্রকৃতি অম্লীয় নাকি ক্ষারীয় নাকি নিরপেক্ষ প্রকৃতির ইত্যাদি জানার জন্য pH একক ব্যবহার করা হয়। কোনো দ্রবণের pH হলো ঐ দ্রবণে উপস্থিত হাইড্রোজেন আয়নের (H+) ঘনমাত্রার ঋণাত্মক লগারিদম। অর্থাৎ-
pH = −log[H+] (pH লেখার সময় p ছোট হাতের আর H বড় হাতের লেখা হয়)
[H+] দ্বারা H+ আয়নের মোলার ঘনমাত্রা অর্থাৎ 1 লিটার দ্রবণে কত মোল H+ আয়ন রয়েছে সেটা বোঝানো হয়।
1 লিটার বিশুদ্ধ পানিতে H+ এর পরিমাণ 10-7 মোল।
বিশুদ্ধ পানির pH = −log[H+] = -log (10-7)
অতএব, বিশুদ্ধ পানির pH = 7
তৃতীয় বন্ধনীর মধ্যে কোনো আয়ন থাকলে মোলারিটি এককে সেই আয়নের ঘনমাত্রা বোঝানো হয়।
যদি বিশুদ্ধ পানিতে এসিড যোগ করা হয় এবং এসিড যোগের কারণে যদি H+ এর সংখ্যা 10 গুণ বেড়ে গিয়ে প্রতি লিটারে 10-6 মোল হয়, তাহলে দ্রবণের pH কমে যাবে।
pH = -log[10-6] = 6
H+ আয়নের ঘনমাত্রা যত বেশি হবে pH এর মান তত কমতে থাকবে।
যদি বিশুদ্ধ পানির মধ্যে ক্ষার যোগ করা হয় তবে ক্ষারের OH- বিশুদ্ধ পানির H+ এর সাথে বিক্রিয়া করে ঐ দ্রবণে বিশুদ্ধ পানির তুলনায় H+ এর সংখ্যা কমে যাবে।
যেমন: পানির মধ্যে ক্ষার যোগ করার কারণে যদি H+ এর সংখ্যা কমে গিয়ে প্রতি লিটারে 10-10
মোল হয় তাহলে তার pH হবে,
pH = -log[10-10] = 10
অর্থাৎ pH এর মান 7 থেকে বেড়ে যাবে। অর্থাৎ ক্ষারীয় দ্রবণের pH এর মান 7 থেকে বেশি। pH এর মান 7 হওয়ার অর্থ এটি ক্ষারও নয় আবার এসিডও নয়। এটি নিরপেক্ষ দ্রবণ। যদি কোনো দ্রবণের pH এর মান 7 থেকে কম হয় তাহলে সেই দ্রবণটি এসিডিক প্রবণ এবং যদি কোনো দ্রবণের pH মান 7 থেকে বেশি হয় তবে সেই দ্রবণটি ক্ষারীয় দ্রবণ।
pH এর পরিমাপ
pH এর পরিমাপ করার জন্য pH স্কেল ব্যাবহার করা হয়।
pH স্কেল: যদিও অংকের হিসাবে pH এর মান ঋণাত্মক থেকে শুরু করে যেকোনো ধনাত্মক সংখ্যা হওয়া সম্ভব কিন্তু বাস্তব জীবনে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে pH এর মান 0 থেকে 14 পর্যন্ত বিবেচনা করা হয়৷
নিরপেক্ষ কোনো দ্রবণের pH হলো এর মান 7 এবং তোমরা দেখেছো যেকোনো এসিড দ্রবণের pH এর মান 7 এর চেয়ে কম অপরদিকে যেকোনো ক্ষারের দ্রবণের pH এর মান 7 এর চেয়ে বেশি। এই স্কেলে সবচেয়ে শক্তিশালী এসিডের pH এর মান এবং সবচেয়ে শক্তিশালী ক্ষারের pH এর মান 14 ।
pH পরিমাপন পদ্ধতি: দ্রবণে হাইড্রোজেন আয়নের ঘনমাত্রা থেকে কীভাবে pH হিসাব করতে হয় তোমরা সেটা জেনেছো। এখন পরীক্ষার মাধ্যমে কোনো দ্রবণের pH কীভাবে পরিমাপ করা হয় সেটা জানবে। pH এর মান পরিমাপের জন্য ইউনিভার্সাল নির্দেশক (Universal indicator), pH পেপার (pH paper), pH মিটার ( pH meter) প্রভৃতি ব্যবহার করা হয়।
ইউনিভার্সাল নির্দেশক: বিভিন্ন এসিড-ক্ষার নির্দেশকের মিশ্রণ হলো ইউনিভার্সাল নির্দেশক (Universal Indicator)। ভিন্ন ভিন্ন pH মানের দ্রবণে ইউনিভার্সাল নির্দেশক ভিন্ন ভিন্ন বর্ণ প্রদান করে। কোনো প্রবণের জন্য ইউনিভার্সাল নির্দেশক কোন বর্ণ ধারণ করবে তা বোঝার জন্য একটি চার্ট রয়েছে। এই চার্টকে ইউনিভার্সাল নির্দেশক কালার চার্ট বলে। কোনো দ্রবণে কয়েক ফোঁটা ইউনিভার্সাল নির্দেশক যোগ করলে দ্রবণ যে বর্ণ ধারণ করে এই বর্ণ ইউনিভার্সাল নির্দেশক কালার চার্টের বর্ণের সাথে মিলিয়ে দ্রবণের pH পরিমাপ করা হয়।
pH পেপার: অজানা pH মানের দ্রবণের pH এর মান জানার জন্য pH পেপার ব্যবহার করা হয়। কোনো দ্রবণের মধ্যে এক টুকরা PH পেপার যোগ করলে পেপারের বর্ণের পরিবর্তন ঘটে। দ্রবণে কত pH মানের জন্য pH পেপারের বর্ণ কীরূপ হবে তার জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড কালার চার্ট আছে। এ চার্টের সাথে দ্রবণের pH পেপারের বর্ণ দেখে অজানা দ্রবণের pH এর মান জানা যায়।
pH মিটার: অজানা স্রবণের pH মান জানার জন্য pH মিটার ব্যবহার করা হয়। pH মিটারের ইলেকট্রোডকে অজানা দ্রবণে ডুবিয়ে pH মিটারের ডিজিটাল ডিসপ্লে থেকে সরাসরি pH মান ছানা যায়।
লিটমাস পেপার: মোটামুটিভাবে pH অনুমান করার জন্য সস্তা এবং সহজলভ্য লিটমাস পেপার ব্যবহার করা যায়। দ্রবণের pH 7 থেকে কম হলে লিটমাস পেপার লাল এবং 7 থেকে বেশি হলে লিটমাস পেপার নীল বর্ণ ধারণ করে।
pH এর গুরুত্ব
কৃষিক্ষেত্রে, জীবদেহে বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ায়, প্রসাধনী ব্যবহারে pH এর গুরুত্ব অপরিসীম। নিচে এগুলো ব্যাখ্যা করা হলো:
কৃষিক্ষেত্রে: কৃষিতে pH এর গুরুত্ব অপরিসীম। উদ্ভিদ তার শরীরের পুষ্টির জন্য মাটি থেকে বিভিন্ন আয়ন, পানি শোষণ করে। এর জন্য মাটির pH এর মান 6.0 থেকে ৪.০ এর মধ্যে হলে সবচেয়ে ভালো। আবার, মাটির pH এর মান 3.0 এর কম বা 10 এর বেশি হলে মাটির উপকারী অণুজীব মারা যায়। মাটির pH এর মান কমে গেলে পরিমাণমতো চুন (CaO) ব্যবহার করা হয়। আবার মাটির pH এর মান বেড়ে গেলে পরিমাণমতো অ্যামোনিয়াম সালফেট, (NH4)2SO4, অ্যামোনিয়াম ফসফেট (NH4)3PO4 ইত্যাদি সার ব্যবহার করলে মাটির pH কমানো হয়।
জীবদেহে বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ায় pH : শরীরের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে তার জন্য শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে বিভিন্ন মানের pH প্রয়োজন হয়। পাশের ছকে সেগুলো উল্লেখ করা হলো:
প্রসাধনী (Cosmetics) ব্যবহারে: মানুষ ত্বক পরিষ্কার করতে, ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষায়, চুল পরিষ্কার করতে এবং বিভিন্ন কাজে প্রসাধনী ব্যবহার করে। ত্বকের pH 4.8 থেকে 5.5 এর মধ্যে থাকলে ত্বক অম্লীয় প্রকৃতির যা ত্বকে জীবাণুর আক্রমণ বা বংশবৃদ্ধি প্রতিরোধ করে। তাই প্রসাধনীর pH 4.8 থেকে 5.5 থাকা ভালো৷
আরও দেখুন...